যেদিকে দুই চোখ যায়, দেখি সবুজ মিশেছে গাড়
ধূসর আকাশে।
আমার চোখের জল বন্দক রাখা ছিল তোমার কাছে,
নির্মলা, কথা রাখনি;
সুযোগ বুঝে, মধ্যমার লীন তাপে বিলীন করেছো
নোনতা বাষ্প,
তাই আজ বৃষ্টি হয়ে ঝরে এক প্রকৃত প্রত্যন্ত
দেশে, আমার লাল মাটিতে।
কবে আবার পাড়ি দিয়েছ সেই ট্রেন এ? দিনের
প্রথম এবং শেষ ট্রেন;
কালো ধোঁয়া উড়িয়ে, আক্রান্ত সিংহের মত গর্জে
ছুটে চলে সেই ট্রেন।
লাল কাদা মেখে, সবুজের কানে যাত্রীদের ইতিহাস
ফিসফিস করে বলে;
সেই ট্রেন! শুধু সুখিয়াকে আজ খুঁজে পাইনা আর, ও নাকি এখন
বর্বর।
বছর দশ আগে, এমনি এক বর্ষা ছিল নির্মলা;
হ্যাঁ, বললাম তো, অন্য বর্ষা।
সেই ট্রেন! তোমার আমার শরীরের ঘামে, বদ্ধ কুপ
ছিল আংশিক আর্দ্র।
সম্পূর্ণ আর্দ্রতা গোপন রাখতে হয় সভ্য
মানুষের কাছে, লাল মাটির কাছে নয়।
পীড়িত মাংসপেশিতে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক হল
যখন, দেখি, তোমার ঠোঁট তৃপ্ত।
ট্রেনের জানলার বাইরে হাত বাড়িয়ে কেড়ে আনলাম
এক মুঠো বৃষ্টির জল;
চোখ মেলনি তখনও, সিক্ত তর্জনী ছোঁয়ালাম তোমার
বুকের মাঝে, কেঁপে উঠলে;
ট্রেনও ব্রেক কষল হঠাৎ! সবুজের মাঝে, কিছু
খুদে ছুটে এলো জানলায়,
আলগা কাপড় ঠিক করলে তুমি। তোমার সারা মুখে এক
মাতৃত্বের আভা;
সেই মুহূর্তে তুমি আমার কাছে কৃতজ্ঞ ছিলে
নির্মলা, অস্বীকার করতে পারবে?
খুদেদের মুঠো ভরা পাহাড়ি ফল, শালপাতা জড়ানো,
এক টাকায় এক মুঠো।
সাত-আট বছরের অর্ধনগ্ন ছেলেটাকে তুমিই
জিজ্ঞাসা করেছিলে তার নাম।
ভয় মুখ করে বলেছিল, “সুখিয়া।“; দুই টাকার ফল
বেচে অদৃশ্য হয়ে গেছিল জঙ্গলে।
তুমি মা হতে পারনি নির্মলা; ছেড়েছ দেশ, ছেড়েছ
আমাকে, আমার লাল মাটিকে।
হাজার মাইল দূরে, তোমার বাৎসল্যকে সবুজ রাখার
তাগিদে, আজও খুঁজে বেড়াই;
খুঁজে বেড়াই সুখিয়াকে। কিন্তু এক মুঠো ফল
নিয়ে আর ছুটে আসে না সেই খুদে;
সুখিয়া আজ কিশোর, এই লাল মাটির ভূমিপুত্র;
শুনেছি, ওর মুঠোতে এখন বন্দুক।